ছোট দল গঠন পদ্ধতি

এইচএসসি (বিএমটি) ভোকেশনাল - হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট-১ - ছোট দল গঠন ও পরিচালনা | NCTB BOOK

মূল কর্মীবাহিনী থেকে কিছু লোক নিয়ে কোনো বিশেষ কাজ করার জন্য যে স্বল্পমেয়াদি দল গঠন করা হয় তাকে ছোট দল বলে। এ দল গঠনে যা যা করতে হয়, তা হলো— 

■ লক্ষ্য নির্ধারণ (Determining goal) : ছোট দল গঠনের শুরুতে প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্যের আলোকে এর লক্ষ্য স্থির করতে হবে। অর্থাৎ, প্রথমে ঠিক করে নিতে হবে যে এরূপ দলের দ্বারা কী উদ্দেশ্য অর্জন করা হবে বা মূলত কী ফল এই দলের দ্বারা চাওয়া হচ্ছে।

■ পদ্ধতি নির্দিষ্টকরণ (Specifying procedure ) : কোনো কাজের পরস্পর নির্ভরশীল কতগুলো পদক্ষেপের সমন্বয় হলো পদ্ধতি। ছোট দল গঠনের আগে এর কাজের পদ্ধতি নির্দিষ্ট করে নিতে হবে।

■ যোগ্যতা নির্ধারণ (Specifying the quality) : ছোট দলের কাজ করার জন্য এর সদস্যদের কী ধরনের যোগ্যতা লাগবে তা নির্ধারণ করতে হবে। অর্থাৎ, উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য নির্ধারিত পদ্ধতিতে কাজ করার জন্য কেমন ধরনের যোগ্যতা লাগবে তা দল গঠনের আগেই ঠিক করে নিতে হবে।

চিত্র : কার্য পদ্ধতি নির্ধারণ

■ সদস্য নির্বাচন (Selecting the person) : নির্ধারিত কাজ করার জন্য কতজন কর্মী লাগবে তা এ পর্যায়ে নির্ধারণ করতে হবে। এরপর তাদেরকে বাছাই বা নির্বাচন করতে হবে। অর্থাৎ, মূল কর্মীবাহিনী হতে কাঙ্ক্ষিত কর্মীদেরকে আলাদা করতে হবে।

■নেতা নির্বাচন (Selecting the leader) : ছোট দলের জন্য একজন নেতা তথা পরিচালক/ব্যবস্থাপক নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে দক্ষতা ও যোগ্যতা কিংবা জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচন করা যেতে পারে। এমন ব্যক্তিকে দলের নেতা বা নির্বাহী করতে হবে যিনি সবাইকে সহজেই লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

■ দায়িত্ব নির্দিষ্টকরণ (Specifying responsibility) : ছোট দলের কার কী দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব থাকবে তা নির্ধারণ করে দিতে হবে। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে ঠিক করে দিতে হবে যে, কার কাছ থেকে কীরূপ ফলাফল আশা করা হচ্ছে।

■ দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব অর্পণ (Deligation of authority and responsibility) : এক্ষেত্রে নির্বাচিত কর্মী ও নির্বাহীকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। এটি মৌখিক কিংবা লিখিতভাবে জানানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের করণীয় কাজ বলে দেওয়া হয় এবং তারা কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্য হবেন তাও বলা যায়।

■প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ (Supply of necessery materials) : কার্য সম্পাদনের জন্য যা যা লাগবে তা ছোট দলকে সরবরাহ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ, যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তির যোগান দিতে হবে। 

■ জবাবদিহিতার ব্যবস্থা (Accountability system) : দলীয় কাজ কীরূপ হচ্ছে, প্রত্যেকে কতটা সহযোগিতা করছে, কারো কোনো অবহেলা বা গাফিলতি আছে কিনা তা যাচাই বা মূল্যায়নের ব্যবস্থাও থাকতে হবে। তাই বলা যায়, বিভিন্ন পর্যায়ে ছোট দল গঠন করা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে কাজ করানো অনেক সহজ হয়। এতে প্রধান নির্বাহীর কার্যভার অনেক লাঘব হয়। আর এজন্য উপরিউক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়

 

ছোট দল পরিচালনা পদ্ধতি (Operating System of Small Team)

প্রকল্পের অনিয়মিত বা প্রাসঙ্গিক কোনো কাজ করার জন্য সাময়িক সময়ের জন্য ছোট দল গঠন করা হয়। এরূপ দল পরিচালনার জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে তা নিচে বর্ণনা করা হলো-

→পরিকল্পনা (Planning) : কোন কাজ, কখন, কীভাবে, কার মাধ্যমে করানো হবে তা নির্ধারণের কাজকে পরিকল্পনা বলা হয়। তাই ছোট দল পরিচালনার ক্ষেত্রে আগে এ ব্যাপারে পরিকল্পনা করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যের আলোকে এ পরিকল্পনা করতে হবে।

→ সংগঠিত করা (Organizing) : কোনো কাজের জন্য লোকবল ও সম্পদের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণের কাজকে সংগঠিতকরণ বলা হয়। অর্থাৎ দলের উপরস্থ- অধীনস্থ কে হবে, নির্দেশ কে দেবে, নির্দেশ অনুযায়ী কে কাজ করবে তা নির্ধারণ করে দিতে হবে।

চিত্র : প্রেষণা দান

→ দায়িত্ব নির্ধারণ (Specifying responsibility) : কোনো কাজ নির্দিষ্ট মান বজায় রেখে করার বাধ্যবাধকতা বা দায়বদ্ধতাকে দায়িত্ব বলে। ছোট দলের সার্বিক দায়িত্ব, প্রত্যেকের পৃথক পৃথক দায়িত্ব কী হবে তা নির্ধারণ করে দিতে হবে। অর্থাৎ, দলীয় ও ব্যক্তিগতভাবে কী কাজ কত সময়ের মধ্যে সম্পাদন করতে হবে তা এ পর্যায়ে ঠিক করে দিতে হবে। প্রত্যেককে তার দায়িত্বও বুঝিয়ে দিতে হবে।

→ কর্তৃত্ব অর্পণ (Assigning authority) : আদেশ-নির্দেশ দেওয়ার বৈধ ক্ষমতাকে কর্তৃত্ব বলে। ছোট দলের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মীদেরকে প্রয়োজনীয় কর্তৃত্ব দিতে হবে। অর্থাৎ, তারা যেন তাদের নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা তাদের হাতে থাকতে হবে।

→ নির্দেশনা দান (Directing) : কোন কাজ কীভাবে করতে হবে তার পন্থা বুঝিয়ে দেওয়াকে নির্দেশনা দান বলা হয় । ছোট দল পরিচালনার ক্ষেত্রেও প্রত্যেকের কাজের পন্থা ও পদ্ধতি বুঝিয়ে দিতে হবে। কাঙ্ক্ষিত মান ও পন্থা কী তা প্রত্যেককে জানাতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে হবে।

→ প্রেষণা দান (Motivation) : কর্মীদেরকে কাজের প্রতি উৎসাহিত বা অনুপ্রাণিত করার প্রচেষ্টাকে প্রেষণা দান বলে। এর মাধ্যমে কর্মীদের মধ্যে কাজের প্রতি স্বতঃস্ফূর্ততা তৈরি হয়। ছোট দলের ক্ষেত্রেও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে কর্মীদের মনে কাজের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করতে হবে।

→ সমন্বয়সাধন (Coordination): দলের সবার কাজকে একই ধারায় লক্ষ্যের দিকে পরিচালনাকে সমন্বয়সাধন বলা হয়। ছোট দলের কাজের ক্ষেত্রেও খেয়াল রাখতে হবে যে কেউ যেন খুব বেশি এগিয়ে না যায়। আর কেউ যেন বেশি পিছিয়ে না পড়ে। সবাই যেন একই তালে কাজ করতে থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

→ নিয়ন্ত্রণ (Cotrolling) : পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করাকে নিয়ন্ত্রণ বলে। ছোট দল পরিচালনার ক্ষেত্রেও দেখতে হবে যে সম্পাদিত কাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছে কিনা। না হলে এর কারণ খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

চিত্র : নিয়ন্ত্রণ

প্রতিবেদন দাখিল (Reporting) : কোনো বিষয় বা কাজ সম্পর্কে তথ্য সম্বলিত বিবরণকে প্রতিবেদন বলা হয়। ছোট দল পরিচালনার ক্ষেত্রেও এর অগ্রগতি, সমস্যা বা সাফল্য সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।

সুতরাং বলা যায়, কোনো অনিয়মিত বা বিশেষ ধরনের কাজ করার জন্য ছোট দল গঠন করা হয়ে থাকে। আর এরূপ দল পরিচালনার জন্য উপরিউক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে।

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion